লোকসভা নির্বাচন: উত্তরপ্রদেশে যেভাবে বাজিমাত করলেন অখিলেশ ইয়াদব - BBC News বাংলা (2024)

লোকসভা নির্বাচন: উত্তরপ্রদেশে যেভাবে বাজিমাত করলেন অখিলেশ ইয়াদব - BBC News বাংলা (1)

ছবির উৎস, Getty Images

Article information
  • Author, রজনীশ কুমার
  • Role, বিবিসি সংবাদদাতা

গত ১লা জুন ভারতের লোকসভা ভোটের শেষ পর্ব মেটার পর সে দিনই সন্ধ্যায় যখন বুথফেরত সমীক্ষা এল, তখন মনে হচ্ছিল উত্তরপ্রদেশে লড়াইটা একতরফা হয়েছে।

কিন্তু পরে দেখা গেল,আসল পরিস্থিতি এমনটাই ছিল যে অযোধ্যায় যেখানে বিজেপি রাম মন্দির নিয়ে এত প্রচার চালিয়েছিল, ঠিক সেখানেই বিজেপির তিনবারের সংসদ লাল্লু সিংকে ভোটে হারিয়ে দিলেন সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদ। দু'জনের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় ৫৫ হাজার।

প্রসঙ্গত, অবধেশ প্রসাদ একজন দলিত। তাকে ফৈজাবাদের সাধারণ আসন (যেটি দলিত বা তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত নয়) থেকে টিকিট দিয়েছিলেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ ইয়াদব।

এদিকে সমস্ত বুথফেরত জরিপেই বলা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ থেকে লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রায় ৭০টি আসন পাবে। কিন্তু মঙ্গলবার যখন ভোট গণনা শুরু হয়, তখন একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা গেল উত্তরপ্রদেশে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন ৪০০ আসন পেরিয়ে যাওয়ার স্লোগান দিয়েছিলেন, সে সময় বিজেপি চেয়েছিল উত্তরপ্রদেশ থেকে সর্বাধিক আসন জিততে। কিন্তু তা হয়নি।

উত্তরপ্রদেশে বিজেপির চেয়ে পাল্লা ভারী দেখা গেল তাদের বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোটের। বিজেপি সেখানে পেয়েছে মাত্র ৩৩টি আসন, আর ইন্ডিয়া জোটের ঝুলিতে গেছে ৪৩টি আসন।

রাষ্ট্রীয় লোক দল বা আরএলডি দুটো আসন জিতেছে। আরএলডি আবার বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ-র অংশ।

এর অর্থ হলো এনডিএ উত্তরপ্রদেশে পেয়েছে মোট ৩৫টি আসন।

৫৪৩টি আসনের লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য তাদের (বিজেপির) প্রয়োজন ছিল ২৭২টি আসন, কিন্তু এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪০টিতে। গত লোকসভায় বিজেপি পেয়েছিল ৩০৩টি আসন।

এবার উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ৬২টি আসনে এবং কংগ্রেস ১৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। ৬২টি আসনের মধ্যে ৩৭টি আসনে জিতেছে সমাজবাদী পার্টি। আর কংগ্রেস ১৭টি আসনের মধ্যে ছয়টিতে জিতেছে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি পেয়েছিল ৬২টি আসন। বহুজন সমাজ পার্টি ১০টি, সমাজবাদী পার্টি ৫টি, আপনা দল (সোনেলাল) দুটি এবং কংগ্রেস একটি আসন জিতেছিল।

কিন্তু উত্তরপ্রদেশে এইবার ২০১৯ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারেনি বিজেপি।

আমেঠিতে প্রায় এক লক্ষ ৬৭ হাজার ভোটে হেরে গেছেন স্মৃতি ইরানি। গান্ধী-নেহরু পরিবারের অনুগত কিশোরী লাল শর্মার সামনে ভোটের ময়দানে টিকতে পারেননি স্মৃতি ইরানি।

আরও পড়তে পারেন
  • নির্বাচনে জয়ের দাবি মোদীর, হাল ছাড়ছে না কংগ্রেসও

  • বিজয় দাবি করে মোদী বললেন 'আজকে আমি ভীষণ, ভীষণ খুশি'

  • বুলডোজার চালিয়ে বাড়ি-ঘর ভেঙে কি মুসলিমদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে?

নরেন্দ্র মোদীর জন্য ধাক্কা

২০১৯ সালে স্মৃতি ইরানিকে আমেঠিতে প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনি ময়দানে নামিয়েছিল বিজেপি।

তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী রাহুল গান্ধীকে ভোটে পরাজিত করেন। সে সময় এর মাধ্যমে একটা বার্তা দেওয়া হয়েছিল যে নেহরু-গান্ধী পরিবারের উত্তরাধিকারী (রাহুল গান্ধী) তার শক্ত ঘাঁটিতে হেরে গিয়েছেন একজন সাধারণ বিজেপি নেতার কাছে।

২০২৪-এর নির্বাচনে রাহুল গান্ধী অবশ্য স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধে লড়েননি। প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থী হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন দলের একজন সাধারণ কর্মীকে, যিনি এই লড়াইটা জিতেছেন।

এবার আসা যাক নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনি ফলাফলের প্রসঙ্গে।

গণনার সময় প্রাথমিক ট্রেন্ডে প্রধানমন্ত্রী মোদীও বারাণসীতে পিছিয়ে থাকলেও দ্রুত এগিয়ে যান। কিন্তু এইবার নরেন্দ্র মোদী শেষ পর্যন্ত জিতেছেন প্রায় দেড় লক্ষ ভোটের ব্যবধানে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী বারাণসী থেকে প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বারাণসীতে ৬৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন মি. মোদী। এই বার পেয়েছেন ৫৪.২৪ শতাংশ ভোট।

অন্যদিকে, ২০১৪ সালে বারাণসীতে মোট ৫,৮১,০২২ ভোট পেয়েছিলেন তিনি, যা ওই আসনের মোট ভোটের ৫৬ শতাংশ। সেই বছর তার প্রতিদ্বন্দ্বী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পেয়েছিলেন ২,০৯,২৩৮টা ভোট।

তুলনায় এইবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর জয়ের ব্যবধান হয়েছে অর্ধেকেরও কম।

লোকসভা নির্বাচন: উত্তরপ্রদেশে যেভাবে বাজিমাত করলেন অখিলেশ ইয়াদব - BBC News বাংলা (3)

ছবির উৎস, Getty Images

কোথায় বাধা পেল বিজেপি?

উত্তরপ্রদেশ এমন একটা রাজ্য যেখানে সরকার এবং বিরোধী দুই পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা নির্বাচনের মাঠে নেমেছিলেন।

মি. মোদী লড়েছেন বারাণসী থেকে আর রাহুল গান্ধী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন রায়বেরিলিতে। বিজেপির রাজনাথ সিং, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ ইয়াদব ছাড়াও তার স্ত্রী ডিম্পল ইয়াদবও ভোটের লড়াই লড়েছেন।

এইবার রায়যেরিলি আসনে চার লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন রাহুল গান্ধী।

উত্তরপ্রদেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট, কৃষি ও কৃষকদের সমস্যার কথা, সংবিধানকে দুর্বল করার বিষয়গুলোকে নির্বাচনি ইস্যু করেছিল সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস। সংরক্ষণের বিষয়ও উত্থাপন করেছিল দুটো দলই।

কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির অভিযোগ, সংরক্ষণের অবসান ঘটাতে চাইছে বিজেপি।

এর পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে 'অগ্নিবীর' নামক প্রকল্প নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে যুবকদের মধ্যে যে ক্ষোভ রয়েছে তা বহুবার প্রতিফলিত হয়েছে রাস্তায়।

উত্তরপ্রদেশের প্রবীণ সাংবাদিক শরৎ প্রধান জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ৩৩টি আসনে আটকে থাকাটা কেবল প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্য একটা ধাক্কা নয়, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের জন্যও খারাপ খবর।

লোকসভা নির্বাচন: উত্তরপ্রদেশে যেভাবে বাজিমাত করলেন অখিলেশ ইয়াদব - BBC News বাংলা (4)

ছবির উৎস, Getty Images

যোগী আদিত্যনাথের উপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে?

এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনি ফল সম্পর্কে তার আগাম অনুমানের কথা উল্লেখ করেছেন এই প্রবীণ সাংবাদিক।

তার কথায়, "আমি ভেবেছিলাম উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ৫০টি আসন পাবে, কিন্তু ৩৩টি আসনে তাদের গুটিয়ে যাওয়ার বিষয়টা প্রমাণ করে যে মানুষ প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং অমিত শাহের ঔদ্ধত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে।"

"বিরোধী দলগুলো দলিত, পিছিয়ে পড়া জাতি এবং উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে মোদী আরও শক্তিশালী হলে সংবিধান সংকটে পড়বে।"

"সেই কারণেই দলিতরাও মায়াবতীর পরিবর্তে ভোট দিয়েছেন ইন্ডিয়া জোটকে। দলিতদের মাঝে এই বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল, যে বিজেপি থাকলে সংরক্ষণ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এমনকি মায়াবতী যে জাতির অন্তর্ভুক্ত, তারাও ইন্ডিয়া জোটের পক্ষেই ভোট দিয়েছেন।"

পুরো ঘটনার প্রভাব বিশদে ব্যাখ্যা করে সাংবাদিক শরৎ প্রধান আরও বলছেন, "উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আসন সংখ্যা ৩৩-এ থমকে যাওয়ার প্রভাব কিন্তু যোগীর উপরেও পড়বে।"

"অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী চাইলে এই পরাজয়ের দায় যোগীর ঘাড়ে চাপিয়ে তাকে মুখ্যমন্ত্রীর আসন থেকে সরিয়ে দিতে পারেন। উত্তরপ্রদেশে যে শীর্ষে পৌঁছেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, সেখান থেকে তার নেমে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।"

মি প্রধান বলেন, "যোগী ভাবতেন উত্তরপ্রদেশে তার চেয়ে বড় নেতা নেই এবং হিন্দুত্বের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল এটাকেও ভুল প্রমাণ করেছে।"

"ভারতের মানুষ একনায়কতন্ত্র পছন্দ করে না। স্মৃতি ইরানির হেরে যাওয়া তো সরাসরি মোদীরই পরাজয়। মোদীর কৌশলেই স্মৃতি ইরানিকে হারিয়েছেন রাহুল গান্ধী। রাহুলের এই কৌশলটা ভালো ছিল যে, স্মৃতিকে হারাবো কিন্তু এক ছোট দলীয় কর্মীকে দিয়ে।"

লোকসভা নির্বাচন: উত্তরপ্রদেশে যেভাবে বাজিমাত করলেন অখিলেশ ইয়াদব - BBC News বাংলা (5)

ছবির উৎস, Getty Images

উত্তরপ্রদেশে কেন ধাক্কা খেল বিজেপি?

এই প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় ব্যাখ্যা করেছেন মি. প্রধান।

তিনি বলেন, "এবারের নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রকাশ্যে এসেছে। প্রথম বার্তাটা মায়াবতীর জন্য এবং সেটা হলো দলিতরা তার (মায়াবতীর) বন্ডেড লেবার নন।"

"দ্বিতীয় বার্তা মোদীর জন্য যে তিনি হিন্দু ও মুসলিমদের মেরুকরণ করে প্রতিবার নির্বাচনে জিততে পারবেন না। মায়াবতী পুরোপুরি বিজেপির পক্ষে ছিলেন এবং যখন তিনি তার ভাইপোকে (আকাশ আনন্দ) সরিয়ে দেন, সে সময়েও (এই পদক্ষেপ) আরও ভুল বার্তা পাঠিয়েছিল। আর ফলাফল তো সবার সামনেই রয়েছে।"

রীতা বহুগুণা জোশী এলাহাবাদের বিজেপি সাংসদ এবং যোগী আদিত্যনাথের প্রথম মেয়াদে মন্ত্রীও ছিলেন।

বিজেপি এবার তাকে টিকিট দেয়নি। তার জায়গায় বিজেপি নেতা কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর ছেলে নীরজ ত্রিপাঠীকে প্রার্থী করা হয়েছিল। তিনিও হেরে গিয়েছেন।

রীতা বহুগুণা জোশীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন এইবার উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আসন সংখ্যা ৩৩শে নেমে এসেছে?

এর উত্তরে তিনি বলেছেন, "সরকার তো আমরাই গঠন করব, কিন্তু স্পষ্টতই ২০১৪ বা ২০১৯ সালের মতো জয় হয়নি। আমরা ইউপিতে কাজ করেছি, কিন্তু কর্মসংস্থানের প্রশ্ন আমাদের সামনে ছিল।"

"অযোধ্যাতেও নির্বাচনে আমরা হেরেছি। এ বার কেন এমন হলো, সেটা আমাদের ভাবতে হবে।"

রীতা বহুগুণা জোশীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনি ফলাফলের প্রভাব সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উপরে পড়বে কি না?

এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন, "আমাদের পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, আমার মনে হয় না কোনও রকম প্রভাব পড়বে।"

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর
  • নরেন্দ্র মোদী কি জোট সরকার চালাতে পারবেন?

  • 'নরেন্দ্র মোদীর দর্পচূর্ণ, বঙ্গে মমতা ঝড়'

  • 'চাইলে বেনজীরকে ১৫ দিন সময় দেবে দুদক'

লোকসভা নির্বাচন: উত্তরপ্রদেশে যেভাবে বাজিমাত করলেন অখিলেশ ইয়াদব - BBC News বাংলা (6)

ছবির উৎস, Getty Images

অখিলেশ ইয়াদবের রণকৌশল

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই এবারের নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির রণকৌশলের প্রশংসা করছেন।

ভোটে টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রে ইয়াদব জাতির নন, এমন প্রার্থীদের ওপর বিশেষ নজর দিয়েছিলেন অখিলেশ ইয়াদব।

মুসলিম এবং ইয়াদবদের সমাজবাদী পার্টির ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু অখিলেশ ইয়াদব ৬২ জনের মধ্যে মাত্র পাঁচজন ইয়াদবকে প্রার্থী করেছিলেন, যাদের সকলেই তার পরিবারেরই সদস্য।

২০১৯ সালে বহুজন সমাজ পার্টি এবং জয়ন্ত চৌধুরীর রাষ্ট্রীয় লোক দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল সমাজবাদী পার্টি।

সমাজবাদী পার্টি সে সময়ে ৩৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এবং ১০ জন ইয়াদব প্রার্থীকে ভোটে দাঁড় করিয়েছিল।

২০১৪ সালে সমাজবাদী পার্টি উত্তরপ্রদেশে ৭৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। তার মধ্যে ছিলেন ১২ জন ইয়াদব প্রার্থী। এদের মধ্যে চারজন ছিলেন মুলায়ম সিং ইয়াদব পরিবার সদস্য।

এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক পঙ্কজ কুমারও ভোটের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অখিলেশ যাদবের প্রশংসা করেছেন।

অধ্যাপক পঙ্কজ কুমার বলেছেন, "ভোটে টিকিট দেওয়ার বিষয়ে সমাজবাদী পার্টি খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অযোধ্যায় একজন দলিতকে টিকিট দেওয়া খুব বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত ছিল।"

"অবধেশ প্রসাদ একজন প্রবীণ সৈন্য। বালিয়ায় সনাতন পাণ্ডেকে টিকিট দেওয়াটাও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত।"

তিনি বলেন, "অখিলেশ যাদব পিডিএ (পিছড়ে, দলিত ও অল্পসংখ্যক)-র কথা বলছিলেন, যেখানে সমস্ত জাতের কথা অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্যদিকে বিজেপি বেশি করে মুসলিম-মুসলিম করে গিয়েছে।"

এই প্রসঙ্গে বিজেপির তরফে তাদের দলের প্রার্থীদের ভোটে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক কুমার।

তিনি বলেন, "বিজেপি খুব খারাপভাবে টিকিট বিতরণ করেছে। আমার মনে হয় না টিকিট দেওয়ার বিষয়ে যোগীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। কৌশাম্বিতে রাজা ভাইয়া বলেছিলেন যে তার লোককে টিকিট দিতে হবে কিন্তু অমিত শাহ রাজি হননি।"

"এলাহাবাদে টিকিট দেওয়া হয়েছিল নীরজ ত্রিপাঠীকে এবং তিনি হেরে গিয়েছেন। দিল্লিতে বসে টিকিট দিয়েছেন অমিত শাহ।"

এখন প্রশ্ন হলো যোগীর রাজনীতিতে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির এই ফলাফলের কী প্রভাব পড়বে?

অধ্যাপক পঙ্কজ কুমার বলছেন, "যোগীর নির্দেশে টিকিট দেওয়া হয়নি, তবে তাকে দোষ দেওয়া যেতে পারে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াটা যোগীর ঘাটতি। রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই।"

অধ্যাপক পঙ্কজ বলেন, "যোগী গুজরাট মডেলে সরকার চালাতে চান। আমলার জোরে সরকার চালাচ্ছেন তিনি। তিনি জনগণ ও দলীয় কর্মীদের চেয়ে পুলিশকে বেশি বিশ্বাস করেন।"

"আমার মনে হয় আরএসএস-ও এই নির্বাচনে সরে দাঁড়িয়েছিল। আরএসএসও অনুভব করতে শুরু করেছিল যে মোদী একটু বেশিই শক্তিশালী হয়ে উঠছেন এবং এটা সংঘের পক্ষে ভালো নয়।"

অধ্যাপক পঙ্কজ মনে করেন, এবারের নির্বাচনে মায়াবতী পুরোপুরি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এবং ফিরে আসাটা তার পক্ষে এখন কঠিন।

"মায়াবতীর জায়গা নিতে পারেন চন্দ্রশেখর। নাগিনা থেকে তার জয়ও এটাই প্রমাণ করে," বলেন মি. কুমার।

উত্তরপ্রদেশে বিজেপির খারাপ ফলাফল নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় মেয়াদের জন্য অনেক প্রস্তুতিকেই নষ্ট করতে পারে।

উত্তর ভারতে যখন আঞ্চলিক দলগুলো সঙ্কুচিত হচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে অখিলেশ ইয়াদব একজন শক্তিশালী নেতা হিসাবে উঠে এসেছেন। আমেঠি ও রায়বরেলিতে কংগ্রেসও বেশ ভালো ফল করেছে।

নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ কখনওই এটা চাননি, তা সত্ত্বেও এমনটা হয়েছে।

আপাতত নরেন্দ্র মোদীর আগামী পাঁচ বছর চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমারের মতো শরিকদের উপর নির্ভর করছে। কিন্তু এই দুই নেতার সঙ্গে বিজেপির অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়।

লোকসভা নির্বাচন: উত্তরপ্রদেশে যেভাবে বাজিমাত করলেন অখিলেশ ইয়াদব  - BBC News বাংলা (2024)

References

Top Articles
Latest Posts
Article information

Author: Domingo Moore

Last Updated:

Views: 5684

Rating: 4.2 / 5 (53 voted)

Reviews: 92% of readers found this page helpful

Author information

Name: Domingo Moore

Birthday: 1997-05-20

Address: 6485 Kohler Route, Antonioton, VT 77375-0299

Phone: +3213869077934

Job: Sales Analyst

Hobby: Kayaking, Roller skating, Cabaret, Rugby, Homebrewing, Creative writing, amateur radio

Introduction: My name is Domingo Moore, I am a attractive, gorgeous, funny, jolly, spotless, nice, fantastic person who loves writing and wants to share my knowledge and understanding with you.